Saturday, 11 October 2014

গাঁয়ের ছায়া মাটির মায়া

আম কাঁঠালের ছায়ার ঘেরা ছোট্ট আমার গ্রাম
গাঁয়ের নামটি পাথরচুড় তার ভারি সুন্দর নাম
দূরে গাঁয়ের পাহাড় চূড়ো মোরে ডাকে ইশারায়
রাঙা মেঘ সাঁতার দিয়ে তারে ঢেকে দিয়ে যায়
গাঁয়ের শেষে যায় যে দেখা অজয় নদীর বাঁক
নদীর ধারে কাশের বনে নাচে শালিক পাখির ঝাঁক
দূরে আর্তনাদের পাহাড়, ক্রন্দন নদীর ঘাট
নীরব নিঝুম স্তব্ধ দুপুরে শুধু ধু ধু করে মাঠ
বাঁশ বাগানের ভিতর দিয়ে সরু এক গলি পথে
কলসী কাঁখে গাঁয়ের বধুরা আসে পুকুরে জল নিতে
লাল ধূলো উড়িয়ে পথে চলছে গরুর গাড়ি,
এই গাঁয়েতেই জন্ম আমার এই গাঁয়েতেই বাড়ি
তেঁতুল বটের ছায়ায় ঘেরা ছোট্ট আমার গ্রাম
গাঁয়ের নামটি পাথরচুড় তার ভারি সুন্দর নাম
দিনের শেষে সূর্য ডোবে সাঁঝের আঁধার নামে,
মৌনমুখর স্তব্ধতা নামে নির্জন এই গ্রামে
ধূপ দীপ জলে প্রতি ঘরে ঘরে মন্দিরে বাজে ঘণ্টা,
ঢাকের শব্দে জেগে ওঠে পাড়া আকুল করে মনটা
বিনিদ্রা রাতের তারারা আকাশে মিটি মিটি করে হাসে,
রাতের আঁধার কেটে গিয়ে শেষে নতুন সকাল আসে
গাঁয়ের ছায়া মাটির মায়া গাঁয়ে এমনই মমতা মাখা
সারা হৃদয় জুড়ে আজও আছে সেই গাঁয়ের ছবি আঁকা
তাল খেজুরের ছায়ায় ঘেরা ছোট্ট আমার গ্রাম

গাঁয়ের নামটি পাথরচুড় তার ভারি সুন্দর নাম

       গাঁয়ের টান

এই গাঁ যে আমার মা,
গাঁয়ের মাটি আমার মা।
এমন গাঁয়ের ছায়া, মাটির মায়া
অন্য আর কোথাও পাবে না।

গাঁয়েতে আম কাঁঠালগাছের সারি
আমের গন্ধে মেতে ওঠে মন।
গ্রাম ছাড়িয়ে রাঙা মাটির পথ,
দূরেতে ঐ শাল পিয়ালের বন।

আমের শাখে, কোকিল ডাকে
এ গাঁয়ে সারাটি দিন ভোর।
মিঠে দখিন হাওয়া দোলা দিয়ে
প্রাণে পুলক জাগায় মোর।

বাঁশ বাগানের ফাঁক দিয়ে
চাঁদ ওঠে, পেঁচা রাতে ডাকে।
দূরে শেয়াল হাঁক দিয়ে যায়,
গাঁয়ের মেঠো পথের বাঁকে। 

গাঁয়ের পাশে ছোটনদী বয়ে চলে
বর্ষায় তার দেখি ভয়ংকর রূপ,
পানা পুকুরে শালুক পদ্ম ফোটে,
পানকৌড়ি দেয় বারেবার ডুব।

গাঁয়ের ছায়া, মাটির মায়া,
গাঁয়ের মানুষ আমার আপনজন।
এই গাঁ ছেড়ে, গাঁয়ের মাটি ছেড়ে,

কোথাও চায় না যেতে আমার মন
              মাটির পৃথিবী

পৃথিবীর এই পান্থশালায় কেহ আসে কেহ যায়।
কেহ থাকে অট্টালিকায় কেহ বা গাছতলায়।
রাজপ্রাসাদে কেউ বা থাকে নরম বিছানায় শুয়ে,
কেউ বা থাকে গাছতলাতে আশ্রয়হীন হয়ে।

ভবের হাটে কেউবা সুখী, কেউ বা নীরবে শুধু কাঁদে।
কেউবা গড়ে মাটির কুটির, কেউ বা সুখের নীড় বাঁধে।
আকাশের চাঁদ মাটির পৃথিবীতে জোছনা হয়ে ঝরে,
ভালবাসা প্রীতি হৃদয়ের গীতি বেজে ওঠে ঝংকারে।

পৃথিবীর এই নাট্যশালায় চলে ভাঙা গড়ার খেলা।
কেহ হাসে কেহ কাঁদে ঘরে ফিরিবার বেলা।
কান্না হাসির স্মৃতির ফলকে দেখি যে কত ছবি,

নিত্য দুঃখ সুখের ইতিহাস লেখে মাটির পৃথিবী।
মহাসপ্তমী দেবীপূজা
মহিষাসুর মর্দিনী দেবী দশভূজা,
শাস্ত্রমতে সকলেতে করে তব পূজা
আদ্যাশক্তি মহামায়া, পার্বতী শঙ্করী,
দনুজদলনী মাতা দানব সংহারী
আজি মহা সপ্তমীতে দেবীর পূজন,
ঢাক বাজে, শঙ্খ বাজে, হরষিত মন
বাজয়ে কাঁসর ঘণ্টা দেবীর মন্দিরে,
দেবীর মঙ্গল ঘট প্রতি ঘরে ঘরে
মঙ্গল ঘট বসায় ধান দূর্বা ঘাস,
এয়োগণে উলু দেয় থাকি উপবাস
পুরোহিত মন্ত্র পড়ে, ধূপ দীপ জ্বলে,
ভক্তিপুষ্প অর্ঘ্য দেয় চরণ কমলে
সন্তোষিতে মহামায়া, করয়ে বিধান,

অষ্টোত্তর শত নীল পদ্ম করে দান
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা

ধরাধামে শুক্লপক্ষে শারদ পূর্ণিমা
প্রচারিতে লক্ষ্মী দেবী আপন মহিমা
বিরাজ করেন দেবী প্রতি ঘরে ঘরে,
সাজায় মঙ্গল ঘট দেবী পূজা তরে
শোভিছে পুষ্পিত ঘট, বিল্বপত্র শাখা,
প্রাঙ্গন চৌদিকে শোভে আলপনা আঁকা
এয়োগণ উলু দেন জয়ঢাক বাজে,
শিশুগণ নৃত্য করে আঙিনার মাঝে
জ্বলে দীপ শঙ্খ বাজে, প্রসাদের থালা,
কলাগাছ,পানপাতা, বরণের ডালা
ধূপদীপ মাঙ্গলিক পূজা উপচার,
এসো দেবী, বসো ঘরে ডাকি বারেবার
সর্বশেষে অন্নভোগ প্রসাদ বণ্টন,
লক্ষ্মী পাঁচালির কথা শুন দিয়া মন


ক্ষুধিত বাঘের মুখে
পূজোর সময় এলো কাছে
সময়ের কাঁটা গেছে থেমে,
মৃত্যুগহ্বর চিড়িয়াখানে মাঝে,
এক কিশোর আসে নেমে
পূজোর খুশিতে মেতেছে ভুবন
ঘরে ঘরে দেবীর আহ্বান,
মৃত্যুদ্বারে বসি গাহিছে তরুণ
জীবনের শেষ দিনের জয়গান
মৃত্যুকবলিত সেই কিশোর,
সামনে দেখে ক্ষুধিত এক বাঘ
মৃত্যুভয়ে কাঁপিছে শরীর তার
যূপকাষ্ঠে বাঁধা যেন বলির ছাগ


বাঘের চোখ দুটো ভয়ংকর!
সামনে তার রয়েছে শিকার,
শিকার পেয়েছে সে বহুদিন পর
কেড়ে নেওয়া সাধ্য আছে কার?
বাঘের সামনে একা ভয়ার্ত কিশোর
মৃত্যুর পদধ্বনি শোনে বারেবার,
গুনিতেছে প্রতি পলে মৃত্যুর প্রহর
পূজো দেখা বুঝি ভাগ্যে নেই তার
মরণের ফাঁদে দিয়েছে পা
পড়ে আছে সে মৃত্যুকূপে
বাঘ এসে থমকে দাঁড়ায়,
সামনে তার মৃত্যুদূতরূপে
বাঘ আছে একদৃষ্টে চেয়ে
পালাবার নাহিক কোন পথ,
জন্মের ঋণ শোধ মৃত্যু দিয়ে
থেমে যাবে এবার জীবনের রথ
ক্ষুধিত বাঘের মুখে কিশোর একা
বাঁচার লড়াই নিয়ে প্রতিযোগিতা
ভুলের প্রায়শ্চিত্ত মৃত্যু দিয়ে,
জীবনের নতুন এক অভিজ্ঞতা
ক্ষুধার্ত বাঘের মুখে ভয়ার্ত কিশোর
বাঁচার লাগি শুধু ব্যর্থ প্রতীক্ষা
জন্মের ঋণ শোধ মৃত্যু দিয়ে
জীবন আর মরণের শেষ পরীক্ষা
জীবনখাতার পাতায় মুছে যায় নাম
শুরু হয় জীবনের শেষ অধ্যায়,
বাঁচার আর এক নাম সংগ্রাম
সামনে এসে বাঘ থমকে দাঁড়ায়
উদ্যত থাবা দিয়ে টুঁটি চেপে ধরে
প্রাণহীন দেহটা মাটিতে লুটায়,
কান্না থেমে যায় আর্তনাদের ভিড়ে
শিকার লয়ে বাঘ জঙ্গলে পালায়
সুরক্ষা বিহীন এই মৃত্যুনগরী
অভিশপ্ত এক চিড়িয়াখানা,
নাহিক কোন সতর্ক প্রহরী,
মৃত্যু দেয় বার বার হানা
পূজার খুশির দিন আনন্দের
আজও শুনি মৃত্যুর কোলাহল,
সন্তানের মৃত্যুতে বাবা-মায়ের
খুশির দিনে দুচোখে ঝরে জল