Friday, 20 May 2016

গাঁয়ের কবিতা সকাল সাঁঝে


আমার গাঁয়ে ছোট ছোট ঘরে থাকি সবে মিলে মিশে,
সামনে দিয়ে বইছে নদী গাঁয়ের মেঠো জমি ঘেঁষে
তাল পাকুড় ও খেজুরের গাছে কত পাখি বাঁধে বাসা,
জোয়াল কাঁধে জোড়া বলদ নিয়ে লাঙল চালায় চাষা

মাঝে মাঝে দেখি লাফায় ফড়িং উঠোনের কচি ঘাসে
ময়না শালিক, কভু বনের টিয়া সেথা দল বেঁধে আসে
ঘোষাল পাড়ার পুকুর পাড়ে, ফিঙে পাখি এসে চরে,
ঢিল ছুঁড়ে মেরে ছেলেরা, আম পাড়ে সারাদিন ধরে

নদীর ধারে কাঁটা কুলের গাছ, পথ চলে গেছে বাঁকা,
আকাশতলে উড়ে যায় চিল, মেলে দিয়ে তার পাখা
দিনের শেষে লাল সূর্য ডোবে, দুরে নীলপাহাড়ের গায়ে,
আঁধার রাতে ডেকে ওঠে পেঁচা জোড়া বটতলার বাঁয়ে

মাঝ রাত হলে ডেকে ওঠে শেয়াল হুক্কা হুয়া রবে

আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকি, কখন সকাল হবে?
রাতের আঁধার কবিতা আমার

আমার গাঁয়ে দিনের শেষে ক্লান্ত পাখিরা ফেরে বাসায়,
আমার গাঁয়ে ক্লান্ত চাষীরা সবাই ঘরে ফেরে সন্ধ্যায়
দূরের গ্রামে জ্বলে ওঠে দীপ শংখের ঝংকার ওঠে,
এক এক করে লক্ষ তারকা, আকাশের গায়ে ফোটে

জোছনা বিহীন চাঁদের আলো কুয়াশা ঝরা এই সন্ধ্যায়,
জোনাকি জ্বলে বটের গাছে ঝিঁ ঝিঁ পোকারা গান গায়
রাতের আকাশেওঠে নি চাঁদ, আঁধার ভরা আজ রাতে,
অমানিশার গহন আঁধারে, প্রিয়া আজ নেই মোর সাথে

আকাশ আঁধারে, কালো মেঘে, এলো নেমে দুরন্ত ঝড়,
কালবৈশাখীর ঝোড়ো হাওয়ায় ডাল ভেঙে পড়ে মড় মড়
অশনি ভরা বিদ্যুত করে খেলা সারা কালো আকাশ জুড়ে,
নদীর কাছে শ্মশানঘাটে রোজ মৃত মানুষের লাশ পুড়ে

দুর্যোগ ভরা আঁধার রাতে ঘুম আসে না কবির চোখে,

বাগদী পাড়ায় কুকুরগুলো সারা রাত ধরে শুধু ভোঁকে
জোছনা রাতের কবিতা

আকাশ জুড়ে জোছনা ঝরিছে, চাঁদ উঠেছে হেসে,
কোটি তারকা জ্বালায় বাতি একসাথে মিলেমিশে
জোছনা ঝরে নদীর জলে, নদীজল ঝিকিমিকি করে,
আকাশ জুড়ে আলোর খেলা জোনাকিরা কেঁদে মরে

নিশুতি রাতে ঘুমোয় সারা গাঁ, তারারা শুধু জাগে,
চাঁদ হাসে আকাশের গায়ে, দেখতে ভালো লাগে
পথের বাঁকে শেয়াল ডাকে, ঘুম ভাঙে মাঝরাতে,
মাধবী আর মালতী লতা, শুয়ে আছে এক সাথে

চাঁদের আলো দেখতে ভালো মুক্তো ঝরে রাশি রাশি,
পাতায় পাতায় নিশির শিশির কথা বলে হাসি হাসি
মনের গহনে প্রাণের স্পন্দন , বাঁধে প্রীতির বাসা,
রাত কেটে শেষে ভোর হয়, মনে জাগে নব আশা

মায়াবী রাতে ঘুম নেই চোখে, আমি শুধু জেগে রই,

জীবনের খাতায়  রচিয়া কবিতা, মনে হয় কবি হই
ভূতোর দুষ্টুমি (ছড়ার কবিতা)
ভূতোর বাবা বল্লে সেদিন, শোন্ রে ভূতো শোন্
এক থেকে একশো পর্যন্ত তুই ভালো করে গোন্
বাবার দিকে তাকিয়ে ভূতো ফ্যালফ্যালিয়ে হাসে,
গুনতে গিয়ে সব ভুলে যায়, মনে কিছু না আসে

একটু পরে ভূতোর বাবা, বলে ভূতোকে ডেকে,
-আ ক-খ লেখতো বাছা, শ্লেটে দেখে দেখে
বাবার কথায় ভূতো তখন, সবকিছু ভুলে গিয়ে,
হিজি বিজি আঁচড় কাটে, শ্লেটে পেনসিল দিয়ে

এর পরে ভূতোর বাবা, বল্লে ভূতোর কাছে এসে,
ভালো করে পড়তো সোনা, আমার কাছে বসে
পড়ার ভয়ে ভূতো তখন কাঁদতে থাকে জোরে,
তাই না দেখে ভূতোর মা ছুটে আসে রান্না ছেড়ে

সোনা আমার মানিক আমার, মা বলে আদর করে,

মায়ের আদর পেয়ে ভূতো, হাসতে থাকে জোরে

Sunday, 21 February 2016


পৃথিবীর পান্থশালা

জীবনের এই পান্থশালায়, কেহ আসে কেহ যায়,
কেউবা হাসে, কেউবা কাঁদে, পৃথিবীর পাঠশালায়।
ঊষর মরুর তরুর ছায়ে, আশায় বাঁধি যে খেলাঘর,
জীবননদীর ঘুর্নিপাকে, সে তো চোরা বালির চর।

জীবনখাতার পাতায় বিধি, লিখে গেছে সুখ ও দুখ,
কেউবা থাকে অট্টালিকায়, কারো হেরি মলিন মুখ।
ভবের হাটে খেলতে এসে, গেলাম হেরে অবশেষে,
সারাজীবন কাটলো দুখে, মানুষেরে শুধু ভালবেসে।

কান্নাহাসির লুকোচুরি হেরি, জীবন নদীর কিনারায়,
শেষের দিনে, চিতার আগুনে, জ্বলে পুড়ে হয় ছাই।
ভাঙাগড়ার খেলা চলে, বিধাতার এই খেলাঘরে,
জীবননদীর বালুচরে, জীবন ও মরণ খেলা করে।

জীবনের এই নাট্যশালায়, সবকিছুই শুধু অভিনয়,
জন্ম হলেই মরতে হবে, ভবের সংসার মায়াময়।

জীবন নদীর তটে
অশ্রু ঝরা কান্না নিয়ে
গড়ে ওঠে আশার প্রাসাদ,
প্রবল ঝড়ে উড়ে গিয়ে,
ভেঙে পড়ে বাড়ির ছাদ।

আকাশ যদি ভেঙে পড়ে,
বিনা মেঘে হয় বজ্রপাত।
অন্ধকারে কেঁদে মরে,
আঁধারভরা মায়াবী রাত।

শ্মশান চিতায় ঝলসে ওঠে
মৃত মানুষের সারি।
ভাসে আজও হৃদয়পটে,
ভুলতে কভু কি পারি?

এ জীবন নিশার স্বপন,
ভালবাসা শুধুই অভিনয়।
অশ্রুজলে ভরে নয়ন,
প্রতি নিঃশ্বাসে ঝড় বয়।

Sunday, 22 November 2015

সোনা মাটির ধান (লোক কবিতা)




ও মাটির ধান রে সোনা মাটির ধান।
ও সোনার ধান রে মাটির সোনা ধান।

চাষী গেছে মাঠে রে সে গায় মাটির গান।
ও মাটির ধান রে ও সোনার ধান।

অঘ্রানেতে ধানের খেতে
সোনার ধান উঠে মেতে
আনন্দেতে সবাই মাতে, উথাল পাথাল পরান।

ও মাটির ধান রে সোনা মাটির ধান।
ও সোনার ধান রে মাটির সোনা ধান।
চাষী গেছে মাঠে রে ও গায় মাটির গান।

সোনা ধান মাঠে মাঠে
চাষীরা সব ধান কাটে,
বেলা গেলে ঘরে ফেরে, দিন হলে অবসান।

ও মাটির ধান রে সোনা মাটির ধান।
ও সোনার ধান রে মাটির সোনা ধান।
চাষী গেছে মাঠে রে সে গায় মাটির গান।

উঠোন মাঝে ধানের গোলা,
ধান রেখেছে চাষী ভোলা।
ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে, আসে সব কিষান।

ও মাটির ধান রে সোনা মাটির ধান।
ও সোনার ধান রে মাটির সোনা ধান।
চাষী গেছে মাঠে রে সে গায় মাটির গান।